আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকা আর ডলারের বিনিময় হার বাড়াসহ ৮ কারণে দেশের বাজারেও দাম সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। শনিবার এক বিবৃতিতে তেলের দাম বাড়ানোর এমন যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়।
এতে জানানো হয়, জ্বালানি বাবদ সরকারকে এখন সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু এই দফায় দাম বাড়ানোর পরও লোকসান বহন করতে হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসিকে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। এতে আর্থিক সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে বিপিসির। এ অবস্থায় জ্বালানির আমদানি নির্বিঘ্ন রাখতে দাম সমন্বয় করে বিপিসির আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পাশের দেশ ভারতে জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় পাচারের আশঙ্কা করছে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক শূন্য ৪ ও অকটেন ৮৪ দশমিক ৮৪ মার্কিন ডলারে নেমে এলে ডিজেল ও অকটেন প্রতি লিটার যথাক্রমে ৮০ ও ৮৯ টাকায় বিক্রি সম্ভব হতো, যা এখন প্রায় অসম্ভব। গত জুলাইয়ে ডিজেল ও অকটেনে বিপিসি প্রায় ৭৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মাসের তথ্য অনুযায়ী ভারতের কলকাতায় ডিজেল প্রতি লিটার ৯২ দশমিক ৭৬ রুপিতে (১১৮.০৯ টাকা) বিক্রি হয়। ওই সময়ের হিসাবে কলকাতার প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ টাকা বেশি ছিল। আর পেট্রলের দম বেশি ছিল প্রতি লিটার প্রায় ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা। এ পার্থক্যের কারণে জ্বালানি পণ্যের পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মূল্য সমন্বয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি পণ্যের মূল্যের পার্থক্যজনিত পাচার রোধ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে এতে।
নতুন দামে আগের চেয়ে ডিজেল ও কেরসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। পেট্রল ৮৬ টাকা থেকে ৪৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা এবং অকটেন লিটার প্রতি ৮৯ টাকা থেকে ৪৬ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩৫।
তেলের দাম বাড়তে না বাড়তেই রাতেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা জানান এরই মধ্যে ট্রাকের ভাড়া বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের এই মূল্য বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে গেল বলে জানান সাধারণ মানুষ।
দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন গত ছয় মাসে জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে।
জ্বালানি তেলের নতুন দর কার্যকরের পর শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে দেখা মিলছে না গণপরিবহনের।
নির্ধারিত বাসের জন্য সড়কে দীর্ঘ অপেক্ষা যাত্রীদের। কোনো বাস দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রীরা উঠছেন বাসে। বাসে উঠতে না পেরে নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। প্রায় প্রতিটি বাসেই দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
চালক ও সহকারীরা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গাড়ি নামাচ্ছে না পরিবহন মালিকরা। পাম্প থেকেও মিলছে না পর্যাপ্ত তেল। এ অবস্থায় জ্বালানির দামের সাথে সমন্বয় করেই রাখা হচ্ছে ভাড়া।
বাড়তি ভাড়া রাখার কারণে বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন যাত্রীরা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জ্বালানির দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বাস মালিকরা।