ঢাকাসোমবার , ২২ নভেম্বর ২০২১
  1. #টপ৯
  2. #লিড
  3. অনান্য
  4. অর্থনীতি
  5. আইন-আদালত
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আন্দোলন
  8. ইচ্ছেডানা
  9. উদ্যোক্তা
  10. ক‌রোনা মহামা‌রি
  11. কৃষি
  12. ক্যাম্পাস
  13. খেলাধুলা
  14. গণমাধ্যম
  15. জাতীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

থামছে না গণপরিবহণে নারী হয়রানি, নির্ধারিত আসন ফাঁকা রাখতে নারাজ পরিবহণ স্টাফরা।

অনলাইন ডেস্ক
নভেম্বর ২২, ২০২১ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

থামছে না গণপরিবহণে নারী হয়রানি
হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকিতে সড়ক আটকে আন্দোলন, ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম সহ নির্ধারিত আসন ফাঁকা রাখতে নারাজ পরিবহণ স্টাফরা। এ‌দি‌কে ধর্ষণের হুমকিদাতা চালক ও সহকারী‌কে গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে।

গণপরিবহণে অসদাচরণ ও হাফ ভাড়া নিতে না চাওয়ার প্রতিবাদে রোববার বকশীবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
গণপরিবহণে নারী যাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনা দিন দিন বাড়ছেই। দেশে গণপরিবহণে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্যান্যভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ আছে, বাসা থেকে বের হয়ে গণপরিবহণে ভ্রমণ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হন কর্মমুখী নারী ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা। গণপরিবহণ কর্মীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার ঘটনা নিত্য ব্যাপার। গণপরিবহণে নারী নির্যাতন নিয়ে কাজ করা নারী নেত্রীদের অনেকেই জানান, গণপরিবহণে পুরুষরা ইচ্ছাকৃত স্পর্শ, কাছে ঘেঁষে দাঁড়ানো, ধাক্কা দেওয়া, চুল স্পর্শ, কাঁধে হাত, শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে নারীদের যৌন হয়রানি করে থাকেন। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলো না থাকা আর প্রশাসনের তদারকির অভাবকে যৌন হয়রানির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এবং অ্যাকশান এইড।

এদিকে রোববার বাসে হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে রাজধানীর বকশীবাজার মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেছে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। জানা গেছে, শনিবার ঠিকানা পরিবহণের একটি বাসে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রী হাফ ভাড়া দিতে চাইলে তাকে বাসের চালক ও হেলপার প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দেয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এর প্রতিবাদে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে রোববার রাতে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া ঠিকানা পরিবহণের চালক মো. রুবেল ও তার সহকারী মো. মেহেদী হাসানকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছেন র‍্যাব। লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর সহকারী পরিচালক আনম ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ধর্ষণের হুমকি পাওয়া ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, শনিরআখড়া থেকে শনিবার সকাল ৮টার দিকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ‘ঠিকানা’ পরিবহণের একটি বাসে ওঠেন। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার পার হওয়ার পর হেলপার তার কাছে ভাড়া চাইলে ২০ টাকা দিয়ে তিনি ১০ টাকা ফেরত চান। এ সময় স্টুডেন্ট ভাড়া রাখতে বলায় বাসের হেলপার ক্ষেপে যায়। একপর্যায়ে গালাগাল শুরু করে। ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, বাকি টাকা ফেরত চাইলে তাকে নেমে যেতে
বলে চালক, হেলপার ও তার আরও এক সহযোগী। এরপর বাস থেকে নামার জন্য ধর্ষণসহ শারীরিক হেনস্তার হুমকি দিয়ে অকথ্য গালাগাল করে হেলপার ও তার সহযোগী। বাস রানিংয়ে থাকায় তিনি এ সময় কিছু বলতে পারেননি। বাসের নম্বরও নোট করতে পারেননি বলে জানান তিনি।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া বদরুন্নেসার অন্য একজন শিক্ষার্থী সুলতানা বলেন, ‘আমি শ্যামলী থেকে প্রতিদিন মৌমিতা, ঠিকানা, নীলাচল বাসে আসা-যাওয়া করি। এসব বাসে হাফ ভাড়া দিতে চাইলে হেলপার কন্ডাক্টররা খুব বাজে ব্যবহার করে। বাসে ওঠানামার সময় হেলপাররা ধরে ওঠানোর নামে শরীরের বিভিন্ন জায়গা স্পর্শ করে।’

সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রুমিন বলেন, এরকম হয়রানির শিকার আজ নতুন নয়। রাজধানীর সব বাসেই মূলত শিক্ষার্থীসহ সব বয়সি নারী যাত্রীই বাসের স্টাফ দ্বারা হয়রানির শিকার হন। তিনি বলেন, তারা ভয়ংকর খারাপ আচরণ করে।

আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বাসে যৌন হয়রানি বন্ধ ও হাফ ভাড়ার দাবি জানান। তারা জানান, মহিলারা বাসে ওঠার সময় হেলপারকে অবশ্যই নেমে দাঁড়াতে হবে। বাস পুরো থামিয়ে যাত্রী নামাতে হবে। মহিলা আসন কেবল মহিলাদের জন্যই বরাদ্দ রাখতে হবে। এছাড়া অভিযোগ জানাতে বাসের ভেতরে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বাসের মালিক/কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও রাখতে হবে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা এসব দাবি পেশ করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতরে দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গণপরিবহণে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৯টি আসন রয়েছে। এসব আসন কখনোই নারী যাত্রীদের জন্য খালি থাকে না। রজনীগন্ধা, মৌমিতা, আজমেরী, তরঙ্গ, অনাবিল, মনজিল, প্রজাপতি, বিহঙ্গ, শিকড়, নীলাচলসহ রাজধানীর প্রায় সব বাসেই বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, ড্রাইভারের সামনের দিকের বা পাশে লম্বা জায়গায় ৪টি আসন নারীদের জন্য রাখা হয়েছে। কোনো কোনো বাসে আবার সেই আসনও দখল করে থাকেন পুরুষ যাত্রীরা। অধিকাংশ সময় বাসে নারী যাত্রী উঠলে তাদের সিট ছেড়ে দেন না পুরুষ যাত্রীরা। অনেক সময় আসন ছেড়ে দিতে বললে, নারী যাত্রীদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। এ সময় বাসের স্টাফরাও পুরুষ যাত্রীদের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। আবার অনেক সময় নারীদের সংরক্ষিত আসন পুরুষ যাত্রীদের দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেলে, তারা বাসে কোনো মহিলা যাত্রীই নিতে চায় না। সড়কে মহিলা যাত্রী দেখলেই, হেলপাররা চালক কে বলেন, ‘ওস্তাদ লেডিস, জোরে টানুন গাড়ি। লেডিসের জায়গা নেই’ চালকরাও হেলপারকে অনেক সময় বলে দেন, ‘ওই মহিলা উঠাইস না।’

জানা গেছে, গণপরিবহণে যৌন হয়রানির কৌশলও বদলেছে এখন। বাস ছাড়াও আরেক গণপরিবহণ টেম্পো/লেগুনাতে যাতায়াতকারী নারী যাত্রীরা বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পাশের যাত্রীর কনুই, পেছান থেকে নারীদের গায়ে হাত দেওয়ার ঘটনা টেম্পো-লেগুনাতেই বেশি। কেউ কেউ অশালীন বা পীড়নমূলক ভাষার মাধ্যমেও যৌন হয়রানি করছেন বলে জানান অনেক নারী। বছর দুই আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণপরিবহণে নারীদের পরিধেয় বস্ত্র কেটে দেওয়ার কিছু ভিডিও সবার নজর কাড়ে। একজন বৃদ্ধ লোক নারীদের কাপড় কেটে দিত। এক পর্যায়ে গণপরিবহণে এক নারীর কাপড় কাটতে গিয়ে পাবলিকের হাতে ধরা পড়ে সে। পরে তাকের্ যাবের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেঘলা সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, গণপরিবহণে যৌন হয়রানি ঘটনার প্রতিবাদ বহু নারীই জানান না লোকলজ্জার ভয়ে। যেসব নারী যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদ করেন তখন অন্য পুরুষ যাত্রীরাও প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তিনি বলেন, যেসব মানুষ নারীদের গায়ে হাত দেওয়াসহ নানা রকমভাবে হয়রানি করেন তারা মূলত বিকৃত মানসিকতার রোগী। তারা যৌন সুখ পাওয়ার জন্য এত বেশি উদগ্রীব থাকে যে, ছোট ছোট যৌন হয়রানি করে যৌন তৃপ্তির সুখ পেতে চায়।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ইকুয়িটি ম্যানেজার কাশফিয়া ফিরোজ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, রাজধানীর বেশির ভাগ বাসকর্মী নারী যাত্রীদের ওঠাতে চায় না। মহিলা সিটে পুরুষ যাত্রীরা দখল করে বসে থাকেন। বাসে ওঠার সময় ৮৮ ভাগ নারী বাসের স্টাফদের দ্বারা শারীরিকভাবে যৌন হেনস্তার মুখে পড়েন। এ অবস্থায় নারীদের নিরাপদ ভ্রমণে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, কর্মক্ষেত্রসহ গণপরিবহণে যৌন হয়রানির শিকার হওয়াতে নারীর আত্মবিশ্বাস কমে যায়, নারী সমাজে তার অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত থাকে। এর ফলে সামাজিক বিভিন্ন কাজে নারীর অংশগ্রহণও কমে যায়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।