ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর বাজারে নৈরাজ্য চলছেই।
১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাসের জন্য ভোক্তাদের গুণতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর, রামপুরাসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ভোক্তা পর্যায় ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকায়।
চলতি মাসের ৩ তারিখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ১২ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৮৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু নির্ধারিত মূল্যে কোথাও গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের ত্রি-রত্ন এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী আমীর হোসেন জানান: সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু সরকার তো আর গ্যাস দেয় না। ডিলারদের কাছ থেকে আমাদের গ্যাস নিতে হচ্ছে কোম্পানি ভেদে ১৩৮০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত।
এরপর আমাদের দোকান খরচ আছে, সার্ভিস চার্জ আছে। এ সবের পর ১২৮৪ টাকায় একটি সিলিন্ডার বিক্রি করলে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান হবে।
তাহলে এতদিন বিইআরসি’র নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি সম্ভব হলো কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন:
কখনোই সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি হয়নি। বাজার ১০০-১৫০ টাকা বেশি ছিল সব সময়।
২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করে আসছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব জানতে চাওয়া হলে তেজগাঁওয়ের রেল গেইট এলাকার বাসিন্দা মঈনুল ইসলাম জানান:
ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে সেটা সহনীয় মাত্র ছাড়িয়েছে অনেকে আগেই।
দিন ঘুরলেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
বিদ্যুতের দাম বাড়েছে। রান্নার গ্যাসের দামও বাড়তি। আমরা কোথায় যাবো।
ভোক্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাহলে আপনারা কেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করছেন না?
তাদের দাবি: নির্দিষ্ট এলাকার গ্যাস সাপ্লায়ার নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি।
অভিযোগ করে হয়তো সাময়িক প্রতিকার পাওয়া গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে তো তাদের কাছ থেকেই গ্যাস নিতে হবে।
তাই তাদের সঙ্গে ঝামেলায় যেতে চান না তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন: দেশে ২০-২২টি কোম্পানি বাজারে এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করে।
কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে বাজারে আছে মাত্র ৪ থেকে ৫টি কোম্পানি। সরবরাহ সঙ্কটকে মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন তারা৷
মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের গ্যাস ব্যবসায়ী জাফর আহম্মেদ জানালেন: ডিলারদের কাছ থেকে গ্যাস নিতে রীতিমতো দেনদরবার করতে হচ্ছে।
আগে যেখানে গ্যাসের গাড়ি এসে গ্যাস দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো এখন সেখানে ফোন দিলেও ফোন ধরে না।
ডিলারের অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তারপর হয়তে ১০টা চাইলে ৪টা দেয়।
৩ সেপ্টেম্বর রোববার এলপিজি গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিইআরসি।
সেখানে বলা হয়: ভোক্তা পর্যায়ে মূসক ব্যতীত মূল্য প্রতি কেজি ৯৬ দশমিক ৮৬ টাকা।
মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজি ১০৩ দশমিক ৩৪ টাকায় সমন্বয় করা হয়েছে।
সে অনুযায়ী রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির মূসকসহ মূল্য দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ২৪০ টাকা।
৪৫ কেজির দাম তিন হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে আগস্টে এলপি গ্যাসের দাম ছিল ১১৪০ টাকা। জুন মাসের তুলনায় আগস্টে ১৪১ টাকা বেশি দরে এই গ্যাস বিক্রি হয়েছে।
জুনে বিক্রি হয়েছিল ৯৯৯ টাকায়।
গত বছর (২০২২) টানা পাঁচ দফা এলপিজির দাম বাড়ে। এতে সবশেষ ৪ নভেম্বর ১২ কেজি ওজনের একটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ এক হাজার ৩১৩ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি, যা ছিল গত বছরের সর্বোচ্চ দাম।
পরে ৩ ডিসেম্বর দাম কমিয়ে এক হাজার ২২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
টানা দাম বাড়ার কারণে গেল বছর আলোচনায় ছিল এলপিজি।