চালের বাজারে অস্থিরতা কমাতে সারা দেশে অবৈধভাবে চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। দুই দিনের অভিযানে অর্ধশতাধিক চাল ব্যবসায়ীকে জরিমানা ও কয়েকটি আড়ত সিলগালা করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অতিরিক্ত চালের মজুত করায় চট্টগ্রামে একটি আড়ত সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। ছয় আড়তদারকে জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নগরীর পাইকারি বাজার চাকতাই এবং বন্দর মার্কেটে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের অভিযানে অংশ নেন। অভিযানে চাকতাই চালের আড়তের এসএ ট্রেডার্সকে পাঁচ হাজার টাকা, সাদ এন্টারপ্রাইজকে পাঁচ হাজার টাকা, বাগদাদ রাইচ এজেন্সিকে দুই হাজার টাকা, আল্লাহর দান চাউল ভান্ডারকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া বন্দর মার্কেট এলাকার গরিবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজকে পাঁচ হাজার টাকা, হাশেম ব্রাদার্সকে এক হাজার টাকা, মেসার্স হাজী অহিদুর রহমানকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক বলেন, লাইসেন্সে উল্লেখিত পরিমাণের বেশি চাল আড়তগুলোতে মজুত করা হয়েছে। এ কারণে মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ও কারসাজি রুখতে দোকান ও মিলগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি চাল মিলসহ পাঁচ জন ব্যবসায়ীকে ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে মজুত থাকা চাল দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাজারে বিক্রিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। দাম কমে আসবে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন হিলির চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবগুলো চালের দোকানেই চালের ভালো মজুত রয়েছে। আগের চেয়ে চালের সরবরাহও বেড়েছে। এতে চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা করে কমেছে। মিনিকেট জাতের চাল ৬৮ থেকে কমে ৬৪, স্থানীয় স্বর্ণা জাতের চাল ৪৮ থেকে কমে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অটোমিলের স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫২ থেকে কমে ৫০ টাকা ও নাজিরশাইল ৫৫ থেকে কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাগেরহাটে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ৫০০ মেট্রিক টন চাল মজুতের অপরাধে মেসার্স বরকত অটো রাইস মিলের মালিক মধু সুধন দামকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের বিসিক শিল্প নগরীতে অভিযান চালিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম এ জরিমানা করেন। একইসঙ্গে মজুত করা চাল দ্রুত খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন রাইস মিল ও গোডাউনের কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন ইউএনও।
ইউএনও মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ চালের বাজার অস্থির করার জন্য একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে মজুত করছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাগেরহাটের বিভিন্ন অটো রাইস মিলে অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে বিসিক শিল্প নগরীর মেসার্স বরকত অটো রাইস মিলে দেখা গেলো, মালিক মধু সুধন দাম তিন মাস ধরে ৫০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করলেও খুচরা বাজারে পাঠাননি। এসব চাল মিলে গুদামজাত করে রেখেছেন।
নাটোরের গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলায় এক হাজার ৬৬৯ মেট্রিক টন ধান অবৈধ মজুতে তিন প্রতিষ্ঠানকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই মজুত ধান দ্রুত বিক্রির আদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নাটোর র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার ফরহাদ হোসেন এবং সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইমরান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইমরান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার হাতিয়ান্দহ বাজারে সবুজ চাল মিলের মালিক সবুজ মানীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি তিনটি গুদামে ৫০০ মেট্রিক টন ধান মজুত করে রেখেছিলেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাকে মজুত ধান বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
চাল মজুত করে দাম বাড়ানোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নওগাঁর বিভিন্ন চালকল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানে বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুর পর্যন্ত ১১ উপজেলায় মোট ৪২টি মামলা দায়ের হয়েছে। বিপরীতে তিন লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার সাপাহার উপজেলায় অভিযানে চারটি মামলা ও ২৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় হয়, সদর উপজেলায় দুটি মামলা ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, মহাদেবপুর উপজেলায় দুটি মামলা ও ৯০ হাজার টাকা জরিমানা, পত্নীতলা উপজেলায় ১২টি মামলা ও দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও আত্রাই উপজেলায় চারটি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এর আগে অভিযান চালিয়ে ১৮টি মামলা ও ৪৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তবে অভিযানের মধ্যেও এখন পর্যন্ত নওগাঁর খুচরা বাজারে কমেনি চালের দাম। বাড়তি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।