ঢাকাসোমবার , ৩ অক্টোবর ২০২২
  1. #টপ৯
  2. #লিড
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আন্দোলন
  7. ইচ্ছেডানা
  8. উদ্যোক্তা
  9. ক‌রোনা মহামা‌রি
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. চাকুরীর খবর
  15. জাতীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অভিনেত্রী শিমু-নোবেলের ভালোবাসার বিয়ের মৃত্যু যেভাবে

দেশইনফো২৪.কম
অক্টোবর ৩, ২০২২ ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। পিতা-মাতা-ভাই-বোনসহ নোবেলের বাসার পাশে ভাড়া থাকতেন। নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হতো। এক পর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নোবেল পিতা-মাতার অমতে ১৮ বছর পূর্বে ভালোবেসে শিমুকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে অজিহা আলিম রিদ (১৭) নামে এক মেয়ে এবং রাইয়ান (৬) নামে এক ছেলে রয়েছে। প্রথম প্রথম নোবেলের পিতা-মাতা নোবেল-শিমু দম্পতির সঙ্গে থাকতো। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য হলে অন্যত্র বসবাস করতে থাকেন। আর নোবেল ৩৪, গ্রীন রোডে স্ত্রী সন্তানসহ বসবাস করতে থাকেন। আদালতে জমা দেয়া চার্জশীটে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আনোয়ারুল কবির বাবুল মানবজমিনকে বলেন, সম্প্রতি চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে খুনের মামলায় স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বন্ধু এসএমওয়াই আবদুল্লাহ ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত।

মামলার বাদীর কোনো আপত্তি না থাকায় শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে আদেশ দিয়ে নথি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নথি থেকে জানা যায়, বিয়ের পর নোবেল শিমুকে সিনেমায় অভিনয় করতে নিষেধ করেন। শিমু নোবেলের কথায় সিনেমায় অভিনয় করা বন্ধ করলেও এটিএন বাংলায় চাকরি করতেন। শিমুর এ চাকরিটা নোবেল ভালোভাবে নেয়নি। এ নিয়ে নোবেল ও শিমুর সংসারে কলহ চলে আসছিল। নিজেদের দাম্পত্য জীবনের কলহের সকল কথা নোবেল তার বাল্যবন্ধু ফরহাদের সঙ্গে শেয়ার করতেন।
কথা কাটাকাটি থেকে ধস্তাধস্তি, এরপর মৃত্যু: গত ১৬ই জানুয়ারি সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে নোবেলের ৩৪ গ্রীন রোডের বাসায় আসে ফরহাদ। কলিং বেলের শব্দ শুনে শিমু দরজা খুলে ফরহাদকে ড্রইং রুমে বসতে দিয়ে বেডরুমে গিয়ে নোবেলকে ফরহাদের আসার সংবাদ দেয়। নোবেল ড্রইং রুমে গিয়ে ফরহাদের সঙ্গে দেখা করে তাকে চা খাওয়ার কথা বলে বেডরুমে গিয়ে শিমুকেও চা খাওয়ার প্রস্তাব করে। নোবেল কিচেন রুমে চা বানাতে যায়। নোবেল চা বানাতে থাকা অবস্থায় শিমু বেডরুমে বসে মোবাইল ফোন দেখতে থাকে। নোবেল শিমুর মোবাইল ফোন দেখতে চাইলে শিমু মোবাইল ফোন দেখাতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে ফরহাদ তাদের বেডরুমে গিয়ে ঢোকে। নোবেল ফরহাদকে বলে, “শিমুকে ধর, ওকে আজ মেরেই ফেলবো।” ফরহাদ শিমুকে ধরতে গেলে শিমু ফরহাদকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর নোবেল প্রথমে শিমুর গলা ধরতে গেলে শিমু তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এবার নোবেল ফরহাদকে শিমুর গলা ধরার জন্য বললে ফরহাদ শিমুর গলা চেপে ধরে আর নোবেল শিমুর দুই হাত চেপে ধরে। একপর্যায়ে শিমু ফ্লোরে পড়ে যায় এবং নোবেল শিমুর গলার উপর পা দিয়ে দাঁড়ায়। শিমু প্রশ্রাব করে দেয়। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। নোবেল ফরহাদকে দেখতে বলে শিমু বেঁচে আছে কিনা। ফরহাদ শিমুর হাত দেখে বলে শিমু বেঁচে নেই।অভিনেত্রী শিমু-নোবেলের ভালোবাসার বিয়ের মৃত্যু যেভাবে

যেভাবে মৃতদেহ লুকায়: নোবেল কিচেন রুম হতে দুটি পাটের বস্তা এবং উপর থেকে মিষ্টির প্যাকেট বাধার প্লাস্টিকের রশি আনে। ফরহাদ শিমুর মাথা উঁচু করে ধরলে নোবেল বস্তার ভিতর শিমুর মৃতদেহের মাথার অংশ এবং ফরহাদ পা উঁচু করে ধরলে নোবেল পায়ের অংশ আরেকটি বস্তার ভিতর ভরে। নোবেল প্লাস্টিকের রশি দিয়ে দুটি বস্তা একত্রে সেলাই করে। সকাল সাড়ে ৯টার সময় নোবেলের বাসার কাজের বুয়া শান্তি বেগম এসে কলিং বেলে টিপ দিলে নোবেল দরজা খোলে। বুয়া তার কাপড়-চোপড় রেখে কাজ শুরু করতে চাইলে নোবেল তাকে বলে, শিমু বাজারে গিয়েছে, আপনি আধাঘণ্টা পরে আসেন। বুয়া চলে যায়। শিমুর মৃতদেহ এবং ফরহাদকে রুমে রেখে সকাল অনুমান ১০টায় নোবেল নিচে গিয়ে তার বাসার সিকিউরিটি গার্ড মো. তারিফকে বলেন, কারেন্ট ফল্ট করছে, লাইন বন্ধ করে দাও, জেনারেটর চালাবে না। তারিফ লাইন বন্ধ করতে না পারায় আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের সিকিউরিটি গার্ড মো. জামাল গিয়ে লাইন বন্ধ করে। নোবেল তখন মো. জামালকে একজন কারেন্ট মিস্ত্রি আনার জন্য বললে তিনি মিস্ত্রি আনতে যান। নোবেল তারিফকে সিগারেট আনতে পাঠান। এই সুযোগে নোবেল এবং ফরহাদ মিলে শিমুর মৃতদেহ ৩য় তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে নিচে নামান। হঠাৎ সিকিউরিটি গার্ড জামাল তার সঙ্গে কারেন্ট মিস্ত্রি মো, জসিমকে নিয়ে এসে পড়লে নোবেল জামালকে তারিফ কোথায় তা দেখার জন্য পাঠান। জামাল তারিফকে খোঁজার জন্য বাহিরে যান। কারেন্ট মিস্ত্রি মো. জসিম কারেন্টের লাইনে চেইঞ্জ ওভার ঠিক করে। নোবেল তাকে একশ’ টাকা মজুরি দিয়ে বিদায় করে দেয়। এই সুযোগে নোবেল এবং ফরহাদ শিমুর মৃতদেহ নোবেলের গাড়ির পেছনের সিটে ওঠায়। পরে তারা দুজনে পুনরায় রুমে যায়। রুমে এসে নোবেল ফরহাদকে শিমুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে গ্রীন রোডের টাওয়ার ছেড়ে আজিমপুর পর্যন্ত গিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করতে বলেন, যাতে মোবাইল নেটওয়ার্কে অন্য টাওয়ার শো না করে।

ফরহাদ সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় তার মোবাইল নোবেলের কাছে রেখে শিমুর মোবাইল নিয়ে আজিমপুর নিউ মার্কেটের কাছে গিয়ে শিমুর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। একটু পর কাজের বুয়া শান্তি বেগম পুনরায় নোবেলের বাসায় যায়। তিনি ঘরের ভিতর ঢুকে ফ্রিজ খুলে মাছ মাংস বের করেন এবং নোবেলকে এক কাপ চা বানিয়ে দিয়ে তার কাজ করতে থাকেন। নোবেল তাকে বলে, আমি বাইরে যাচ্ছি, তুমি যাওয়ার সময় রিদকে বলে যেও রাইয়ান ঘুম থেকে উঠলে সে যেন রাইয়ানকে খাওয়ায়। ফরহাদ সকাল আনুমানিক ১০টা ৫৮ মিনিটে নোবেলের বাসায় ফিরে আসেন। তারা দুজনে শিমুর মৃতদেহ ফেলে দেয়ার উদ্দেশ্যে সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকায় নোবেলের গাড়িতে থাকা মৃতদেহ নিয়ে ঢাকার মিরপুরের দিকে রওনা করেন। নোবেল গাড়ি চালান এবং ফরহাদ তার বাম পাশের সিটে বসেন। মিরপুর এলাকায় দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি করে মৃতদেহ ফেলার কোনো সুযোগ না পেয়ে তারা বিকাল আনুমানিক ৫টা ৪৫ মিনিটে বাসায় ফিরে আসেন। বাসায় ঢোকার আগে নোবেল ফরহাদকে পৌনে ৭টায় কলাবাগান এলাকায় রেডি থাকতে এবং সেখান থেকে তুলে নেবে বলে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আসেন, উদ্দেশ্য তারা একা একা বের হলে মানুষ তাদের সন্দেহ করবে না। শিমুর মৃতদেহ ভর্তি গাড়ি বাসার নিচতলায় রেখে নোবেল সময় অতিবাহিত করতে থাকেন। নোবেল বাসার নিচে থাকা অবস্থায় তার মেয়ে অজিহা আলীম রিদ নোবেলকে ফোন দিয়ে বলে, বাবা খালা মনি ফোন দিয়েছে আম্মু কোথায়, আম্মুর ফোন বন্ধ। একটু পর ফাতেমা (শিমুর বোন) নোবেলকে ফোন দিয়ে তার বোনের বিষয়ে জানতে চান।অভিনেত্রী শিমু-নোবেলের ভালোবাসার বিয়ের মৃত্যু যেভাবে

নোবেল তাকে বলে খোঁজ নিচ্ছি। সন্ধ্যা অনুমান ৭টা ৩৫ মিনিটে নোবেল পুনরায় শিমুর মৃতদেহ ভর্তি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে কলাবাগান হতে ফরহাদকে গাড়িতে তোলে। এরপর তারা একত্রে মোহাম্মদপুর-বসিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলীস্থ আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ উত্তর পাশে পাকা রাস্তা সংলগ্ন ঝোপের ভিতর শিমুর মৃতদেহ ফেলে দেয়। এরপর তারা একটু সামনে গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে পূনরায় একই রাস্তায় ঢাকা আসার পথে রাস্তায় ফরহাদ প্রথমে শিমুর ভেনেটি ব্যাগ এবং পরে একটি ব্রিজের উপর হতে শিমুর ব্যবহৃত মোবাইল পানিতে ফেলে দেয়। তারপর তারা একত্রে আসাদ গেট আসার পর নোবেল জানায়, সে উত্তরায় শিমুর বোনের (ফাতেমা) বাসায় যাবে। ইতিমধ্যে শিমুর বড় ভাইয়ের স্ত্রী শাহিনা রশিদ ফোন করে নোবেলকে জানায়, তারা নোবেলের বাসায় আসছে। তখন নোবেল আসাদ গেটে। ফরহাদকে নামিয়ে দিয়ে রাত অনুমান ১০টা ৫ মিনিটে তার গ্রীন রোডের বাসায় চলে যায়। নোবেলের বাসায় শিমুর আত্মীয়স্বজন আসে এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে শিমুর খোঁজ করতে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর শিমুর আত্মীয়-স্বজনসহ নোবেল কলাবাগান থানায় গিয়ে শিমুর নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ হতে হাসপাতালে শিমুর মৃতদেহ রয়েছে সংবাদ পেয়ে মামলার বাদীসহ শিমুর আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে গিয়ে শিমুর মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

শিমুর হত্যাকারী সন্দেহে তার স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু ফরহাদকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর তারা শিমু হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরবর্তীতে আসামি খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) এর দেখানো ও শনাক্তমতে তাদের পারিবারিক গ্যারেজ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত অ্যাস কালারের প্রাইভেট কার এবং গাড়ির সিটের পিছনে রক্ষিত মৃতদেহ বস্তাবন্দি করার কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের দড়ির অবশিষ্টাংশ পেয়ে ১৮ই জানুয়ারি উপস্থিত সাক্ষীগণের সম্মুখে জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করা হয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।