চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন ছন্দা রায় নামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্রী। সোমবার রাজধানীর মুগদা থানার মানিক নগর এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে ছন্দার বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছন্দার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়। তিনি রাবি’র অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার স্বামীর নাম উত্তম কুমার। তার নিজের বাসা দিনাজপুরে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত। স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মুগদায় ভাড়া বাসায় থাকতেন ছন্দা।
ছন্দার সহপাঠী অনিক জানান, আমরা ছন্দার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তিন মাস আগে ছন্দার বিয়ে হয়। স্বামীর চাকরিসূত্রে ছন্দা স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকতো।
ছন্দার স্বামীর ভাষ্যমতে, সোমবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যবর্তী সময়ে নিজ কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে ছন্দা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ছন্দার পরিবার জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে ছন্দা একটি সুসাইড নোট লিখে গেছে। তাতে লিখা আছে- ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয়’ এবং ছন্দার হাতের লিখার সঙ্গে সেই লেখার মিল রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নবেন্দ্র কুমার বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা এই মৃত্যুর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে বিবেচনা করছি। আমরা মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আর এ ঘটনায় নিহতের পারিবার কাউকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেনি। তবে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে। মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ছন্দার এই ‘আত্মহত্যা’র ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ^বিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এই দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাবেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় একই বিভাগের শিক্ষার্থী রাজীব সরকার বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত পাঁচ বছরে তাকে সদাহাস্যোজ্জ্বল এবং বন্ধুসুলভ মানুষ হিসেবে দেখেছি। একজন বন্ধুসুলভ মানুষ খুব সহজে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাওয়ার কথা না। আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিনা যে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
ছন্দা রায়ের সহপাঠী আয়রিন আক্তার বলেন, কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিনা যে ছন্দা আর আমাদের মাঝে নেই। ও এমন কাজ করার মতো মেয়ে না।
বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ছন্দার আত্মহত্যার বিষয়টি আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সে অনেক নম্র, ভদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সে একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ে। কাজেই আমরা এটাকে আত্মহত্যা বলতে পারি না। নিশ্চয়ই এর পিছনে অনেক গভীরতম বিষয় লুকিয়ে আছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা এর পিছনে জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা আশা করছি। মানববন্ধনে বিভাগটির শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।