মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতিতে সৃষ্টি করে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার এই জীবনে ঈমানের পরেই মুসলমানদের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। নামাজই একমাত্র ইবাদত যার মধ্যে সমস্ত মাখলুক (তথা গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়, সাগর ইত্যাদি) সব বস্তুর ইবাদত পাওয়া যায়, তাই নামাজকে ‘উম্মুল আমাল’ (সমস্ত আমলের মূল) বলা হয়। আর এই নামাজ সহিহ শুদ্ধভাবে আদায় হওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয় ফরজ। এর মধ্যে অন্যতম একটি ফরজ হলো পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘(হে আদমের সন্তান-সন্ততি!) যখনই তোমরা কোনো মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের সুভার বস্তু (অর্থাৎ শরীরের পোশাক) নিয়ে আসবে’ (সূরা আরাফ-৩১)। বোঝা গেল, নামাজের সময় সামর্থ্য অনুযায়ী সাজসজ্জার পোশাক পরিধান করা শ্রেয়। তাই নামাজ সবসময় উত্তম পোশাক পরিধান করে আদায় করা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লিখতে হচ্ছে, দ্বীনের অন্যতম স্তম্ভ নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে, গ্রামেগঞ্জে, শহরে-বন্দরে অনেক মসজিদে এমন বহুসংখ্যক নামাজিকে দেখা যায়, যারা ছেঁড়া-ফাটা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করে, ভালো পোশাক না থাকলে, ছেঁড়া-ফাটা ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করলে কোনো সমস্যা নেই।
তবে সামর্থ্যবান কোনো ব্যক্তির ওই ধরনের ছেঁড়া-ফাটা পোশাককে নির্দিষ্ট করে নেয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। সোনালি যুগের ফুকাহায়ে কেরাম ওই ধরনের পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করাকে মাকরুহ লিখেছেন। অর্থাৎ মানুষের সামনে যে পোশাক পরিধান করে যেতে লজ্জা হয়, সেই ধরনের পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। নামাজ আদায় মানে তো আল্লাহ তায়ালার সামনে হাজিরা দেয়া। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তুমি এমনভাবে নামাজ আদায় করবে যেন আল্লাহকে দেখছ, আর যদি আল্লাহকে দেখতে না পাও, তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন’ (আবু দাউদ-৪৫৯৫)। তা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা সুন্দর তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সুন্দর, সুন্দরকে পছন্দ করেন’ (মুসলিম-৭৬৭৪)। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সৌন্দর্যের সৃষ্টিকর্তা ও সৌন্দর্যের অধিকারী, তার সত্তা ও তার গুণাবলি সবই সুন্দর। সর্বক্ষেত্রে তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘এক ব্যক্তি রাসূল সা:-এর দরবারে নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে এলো। রাসূল সা: তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি সম্পদ নেই? উত্তরে বলল, আমার সব ধরনের সম্পদ আছে। রাসূল সা: বললেন, তাহলে সম্পদের কিছু আছর সবসময় শরীরে দেখাও’ (মুসনাদে আহমাদ-১৫৮৮৭)। বোঝা গেল, সামর্থ্য ও সম্পদ থাকলে উত্তম ও ভালো পোশাক পরিধান করা। তা ছাড়া এটি আমলি শুকরিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম (হাটখোলা মাদরাসা) মধুপুর, টাঙ্গাইল