টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম, হাঁটু পানি বাসাবাড়িতে।
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে।
সড়ক-অলিগলি থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতেও পানি। হাঁটু থেকে গলাসমান পানিতে মানুষের দুর্ভোগ
চরমে। দোকানপাট ঠিকমতো খুলছে না।
অনেক বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। যাতায়াতব্যবস্থা অনেকটা থমকে গেছে।
খাতুনগঞ্জ বাজারে কেনাবেচায় ধস নেমেছে। বুধবার থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়।
সর্বশেষ তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। খলিফাপট্টি, চকবাজার,
দেওয়ানবাজার, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, বাদুড়তলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর,
কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া,
ফিরিঙ্গিবাজার, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, রিয়াজুদ্দিন বাজার, মুরাদপুর, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, কালারপোল,
বড়পোল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে আছে।
গতকাল রবিবার ২৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিতে সড়ক থেকে অলিগলি তলিয়ে গেছে হাঁটু থেকে গলাসমান পানিতে।
দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে আসবাব।
জ্বলছে না রান্নার চুলা। এর মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি অফিস, শিল্প ও কল-কারখানা খোলা থাকায়
ভোগান্তিতে পড়েছেন চাকরিজীবীরা।
বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা।
উন্মুক্ত নালা ও ফুটপাতের ভাঙা স্ল্যাব পথচারীদের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে অনেকটা।
টানা বৃষ্টির কারণে ঝুঁকিতে থাকা আকবরশাহ এলাকার বিজয়নগর ও ঝিল পাহাড়ে বসবাসরত
২৫০টি পরিবারকে শনিবার দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
রিয়াজউদ্দিন কাঁচাবাজারের মুখে হাঁটুর বেশি পানি। লাভ লেইন থেকে নিউ মার্কেটমুখী সব ধরনের
যানবাহন নিউ মার্কেটের দিকে না গিয়ে আবার লাভ লেইনের দিকে ঘুরে আসছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদপুর এলাকায় ড্রেন ও সড়কে পানি একাকার হয়ে যায়।
ওই এলাকা থেকে উত্তর চট্টগ্রামমুখী বিভিন্ন বাস, মিনিবাস, সিএনজি অটোরিকশাসহ যায়।
কিন্তু যানবাহন সংকটের কারণে কর্মজীবী অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন।
পাঁচতলাবিশিষ্ট আধুনিক চক সুপার মার্কেটের নিচতলায় কোমর পানি দেখা যায়।
এর সামনে ও আশপাশে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে প্রায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।
দুপুর ১টার দিকে তেলিপট্টির মোড়ের সামনে কাপাসগোলা থেকে বাদুড়তলা আশপাশে প্রায় দেড়
কিলোমিটার এলাকায় সড়ক-উপসড়ক ও অলিগলিতে হাঁটু থেকে কোমরের বেশি পানি।
সেখানে রিকশা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ।
চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট যাওয়ার পথে রিকশাচালক মোজাম্মেল হক বলেন, আগের দুই
দিনের চেয়ে আজকে (গতকাল) বেশি পানি।
সকালে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ধরে পানি ছিল। রিকশা চালাতেও সমস্যা হচ্ছে।
বহদ্দারহাট এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের মুখে সড়ক ভাঙাচোড়া।
এর সামনে সড়কে কোমর থেকে গলা পানি।
একটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহিম উদ্দিন বলেন, ‘২ নম্বর ষোলশহর থেকে বহদ্দারহাট
প্রধান সড়কে প্রায়ই সময় বৃষ্টি হলে সড়কে পানি ওঠে। চার-পাঁচ বছর ধরে জলাবদ্ধতা নিরসন
প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা এলে বলা হয়, আগামী বর্ষায় সুফল পাব।
কিন্তু সুফল পেতে আর কত দিন লাগবে? আর কত দিন এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হবে।’
প্রধান আবহাওয়া কার্যালয় চট্টগ্রামের পতেঙ্গার পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, ‘চলতি বছরে এটা সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
তিনটি কারণে চট্টগ্রামে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো হলো মৌসুমি বায়ু প্রবলভাবে সক্রিয় থাকা, বজ মেঘ ও বায়ুর চাপে তারতম্য।
আরো দুই দিন এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
এই সময় চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে।