ঢাকাশুক্রবার , ২৫ আগস্ট ২০২৩
  1. #টপ৯
  2. #লিড
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আন্দোলন
  7. ইচ্ছেডানা
  8. উদ্যোক্তা
  9. ক‌রোনা মহামা‌রি
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. চাকুরীর খবর
  15. জাতীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

৭১’এর এক মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাঁথা গল্প।

দেশ ইনফো ডেস্ক
আগস্ট ২৫, ২০২৩ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

পর্ব-১….

১৯৭১ সালে আমি তখন ‘রতন কান্দি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।

২৫ মার্চ’৭১ কাল রাত থেকে শুরু হলো পাকস্তানি সৈন্যদের নৃশংসতা। ওরা বিশ্বের জঘন্যতম নৃশংসতার নাম দিল “অপারেশন সার্চলাইট”। ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর চালালো নৃশংস জ্বালাও, পোড়াও, নির্যাতন আর হত্যা।

পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতার সংবাদ পেয়ে বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও শেষ বাণী ঘোষনা করলেন।
দেশ বাসীকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানালেন। জাতির পিতা বললেন, “আপনাদের কাছে আমার আবেদন, দেশ কে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান।”

আরও পড়ুন: পর্ব-২

২৫ মার্চ’৭১ এর পর আস্তে আস্তে পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা সারা দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে ক্যাম্প স্থাপন করলো।
১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া জামায়াতে ইসলাম, মুসলিম লীগ ও অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ নেতা কর্মীরা পাকিস্তানের পক্ষ নিল।
পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের সহযোগিতার জন্য পীচ কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও অন্যান্য বাহিনী গড়ে তুললো।
পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা কিছু বিহারী যুবকদের “হিন্দুদের শায়েস্তা করতে হবে” বলে সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং দিয়ে এদেশে নিয়ে এসেছিল।
শুরু হলো পাকিস্তানি সৈন্যদের সারা দেশে ধরপাকড়। পুরুষদের উলঙ্গ করে হিন্দু মুসলমান পরীক্ষা করতো।পুরুষেদের বলতো ‘কাপড়া তোলো, চার কলেমা বাতাও’। লোকজনদের হিন্দুদেরকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাস করতো ”মালাউন কাহা হ্যায়?।
মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে জিজ্ঞাসা করতো- ‘মুক্তি কাহা হ্যায়, মুক্তি কিধার চে আয়া, কিধার মে য্যায়া, মালুম ন্যাহী’, ইত্যাদি প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতো যা আটককৃত হিন্দুদের জানা ছিলোনা।

পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় সারা দেশব্যপী জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, গনহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজ করতে থাকলো।

পাকিস্তানি বিহারী সৈন্যরা তাদের সাথে চাকরি করা বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে থাকলো।
কিছু বাঙালি সৈন্য অস্ত্র নিয়ে অথবা খালি হাতে পালিয়ে এলেন। হানাদারেরা তাদেরই সাথী কিছু বাঙালি সৈনিককে হত্যা করে ছিল।
পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগীতা করার জন্য জামায়াতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে পীচ কিমিটি, রাজাকার বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী গড়ে তোলে।

পীচ কিমিটির লোক ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সৈন্যদের আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী ও হিন্দুদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিতে থাকলো। পাকিস্তানি সৈন্যদের রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে গ্রামের আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের বাড়ি চিনিয়ে দিতো।
তারা চিনিয়ে দিত কোন বাড়ির লোক মুক্তিযুদ্ধে গেছে। তারা পাক হানাদারদের তথ্য দিতো, বাড়িঘর লুটতরাজ ও চাদাঁ বাজি করতো।

পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা হত্যা, গণ হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ ও অন্যান্য মানবতা বিরোধী জঘন্যতম কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো।

তাদের এই নিষ্ঠুরতা দেখে জাতি এমনকি পুরো বিশ্ব স্বম্ভিত হয়ে পড়লো।  প্রতিদিন পাকিস্তানি সৈন্যদের নৃশংসার কথা জানতাম বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে।

তখন স্কুল কলেজ সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা সহ অন্যান্য শহরে চাকরি করা আমাদের এলাকার অধিকাংশ চাকুরী জীবী জীবন বাঁচাতে বাড়িতে বাড়িতে এসে অবস্থান নিলেন।
তাঁদের কাছ থেকে ও অন্যান্যের কাছ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস ভয়াবহতার কথা জানতে পারলাম।
উল্লাপাড়া থানার চড়িয়া ও কান সোনা ঘোষ পাড়া, সাথিঁয়া থানার ডেমড়া (বাউস গাড়ি রুপসী) ও করঞ্জাতে গনহত্যা শুরু হলো।

দেশের তখন ভয়াবহ অবস্থা। পাকিস্তানি সৈন্যরা এক এক  রাতে এক এক গ্রাম ঘিরে রেখে ভোর থেকে গনহত্যা চালানো শুরু করলো।
গনহত্যার সাথে এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধী সহযোগীদের দিয়ে চালায় লুটতরাজ। বাড়িঘর ও দোকানে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।

২৫ মার্চ কাল রাতের অপারেশন সার্চ লাইট এর পর থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী ও হিন্দুরা অনেকে ভারতে আশ্রয় নেয়।
বাঙালি সৈন্য, ই.পি.আর পুলিশ, আনসার ও অন্যান্যরা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালায়। তার পর জাতির পিতার নির্দেশ অনুসারে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বীর বাঙ্গালী।
বাঙালী সৈনিক, ই.পি.আর, আনসার ও অন্যান্য প্রশিক্ষিত বাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় এদেশের অধিকাংশ কৃষক, শ্রমিক,ছাত্র ও অন্যান্য নারী-পুরুষ।
পেশাদার প্রশিক্ষন প্রাপ্ত আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাঙালিদের কুলিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছিলো না।
প্রশিক্ষন অস্ত্র ও সহযোগিতার জন্য বাঙালি সৈন্য ও অন্যান্যরা ভারতে আশ্রয় নেয়।

আমাদের গ্রামে করতোয়া নদী সংলগ্ন। পাকিস্তানের সৈন্যদের আসতে হলে করতোয়া নদীর পাড় হয়েই আসতে হবে। নৌপথ ছাড়া গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা আসতে পারবেনা।
আমাদের গ্রামের মুসলমানেরা খুব ভালো ছিলো।
গ্রামের সর্বজনাব ডা. মো: জয়নুল আবেদিন সরকার (জতু ডাক্তার),
ভাইস প্রিন্সিপাল মো: নুরুল হক সরকার কেমিষ্ট মো: নজরুল ইসলাম সরকার,
ডা.মো: খলিলুর রহমান, মো: আব্দুল সরকার,
মৌলভী মোহাম্মদ হোসাইন, মো: শাহ আলম মাষ্টার,
মো: আব্দুল মজিদ সরকার, মো: আবুল কালাম,
মো: আকবর আলী মোল্লা, মো: ইউনুস মাষ্টার,
মো: আকবর আলী প্রামানিক সহ গ্রামের নেতৃস্থানীয় মুসলমানগণ  মুসলমান যুবক ও সম্ভাব্য অন্যান্যদের ডেকে বললেন-
“ সারা দেশের ভয়াবহ অবস্থার কথা আপনারা সবাই জানেন। সারা দেশের যেখানে যাই হোক সবাই দেখবেন আমাদের গ্রামের হিন্দুদের যেন কোন প্রকার ক্ষতি না হয়।
হিন্দুরা আমাদের আমানত…। আমরা আমাদের গ্রামের হিন্দুদের রক্ষার জন্য সর্বাত্মক সতর্ক থাকবো।”

আমাদের গ্রামের একজন মানুষও পীচ কমিটির সদস্য, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধী হয় নাই। সব মুসলমানেরা মিলে হিন্দুদের জান মালের নিরাপত্তা দিয়ে ছিলেন।
ডেমড়া গণহত্যা পর থেকে আমরা দিন রাত গ্রাম পাহাড়া শুরু করলাম। প্রতিবেশী মুসলমান যুবকেয়া আমাদের সহযোগিতার জন্য সাথে থাকলো।
বড়দের নির্দেশে মো: আব্দুল মজিদ, আবুল কালাম ,
গোলাম মাহবুব নান্নু, মো: আব্দুস ছাত্তার,
মো: আনাইমোল্লা, মো: ইমান আলী, মো: নজরুল ইসলাম,
মো: লাল মিয়া, মো: শামসুল হক ও অন্যান্যরা রাত দিন পালা করে করে আমাদের সাথে থেকে পাহাড়া দিল।

আমাদের পরিবার কয়েক দিন রাতে প্রতিবেশী মুসলমানদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ঘুমাতাম।
আমাদের গ্রামের মুসলমানেরা এত ভালো ছিলো যে, তাঁরা আমাদের জন্য ঘর ও বিছানা ছেড়ে দিয়ে নিজেরা বারান্দায় ঘুমাতেন।
আমরা কয়েক দিন গ্রামের বাড়ি ছেড়ে আমাদের গ্রাম অপেক্ষা আরো প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বাচড়া গ্রামের এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকলাম।
একাকী মনে মনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলাম। মানুষের বাড়িতে আর কত দিন থাকা যায়।
আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে আবার গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলাম।
আমাদের গ্রামের আমরা অন্যান্য যুবকেরা নিজেদের উদ্যোগে রাত-দিন পালা করে করে পাড়া পাহাড়া দিতে থাকলাম। আর আমি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পথ খুঁজতে থাকলাম।

চলবে………..

নিজের স্মৃতি কথা লিখেছেন
-বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।