ঢাকারবিবার , ২৭ আগস্ট ২০২৩
  1. #টপ৯
  2. #লিড
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আন্দোলন
  7. ইচ্ছেডানা
  8. উদ্যোক্তা
  9. ক‌রোনা মহামা‌রি
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. চাকুরীর খবর
  15. জাতীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

৭১’এর এক মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাঁথা গল্প।

দেশ ইনফো ডেস্ক
আগস্ট ২৭, ২০২৩ ১২:২৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পর্ব-২……

দিনটি ছিল ৬ শ্রাবণ ১৩৭৮ ও ২৩ শে জুলাই’৭১ শুক্রবার। শ্রাবণ মাসের প্রথম দিক। বর্ষাকাল।

রাত ৮ টার দিকে দেখি আমাদের বাড়ি অদূরে পালেদের বিলে দুইটি ছই ওয়ালা নৌকা।
নৌকা দেখে এগিয়ে গেলাম। বাচড়া গ্রামের আমার পরিচিত মো: আব্দুল ওহাব কে দেখতে পেলাম।
জিজ্ঞাস করলাম। কী হবে? ওহাব বললো এম পি এ. জনাব মো: আব্দুর রহমান স্যার এলাকার ইচ্ছুকদের মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং জন্য ভারত নিয়ে যাচ্ছেন।
আমি বললাম তাহলে আমিও যাবো। আমি চলে এলাম বাড়িতে।

আরও পড়ুন: পর্ব-১

গোপনে আমার জামা কাপড় গোছালাম তারপর আমার পড়ার খাতার একটি পৃষ্ঠা ছিড়ে মাকে উদ্দেশ্য করে একটি চিরকুট লিখলাম……..
“মা, প্রনাম নিও, বাবাকে আমার প্রনাম দিও। বড় দাদা, মেজদাদা, ও বৌদিকে প্রনাম দিও।
ছোট ভাই বোনকে হাশিষ দিও। আমি মুক্তিযুদ্ধে গেলাম।
তোমাদেরকে বলে গেলে যেতে দিতে না জন্য না বলে চলে গেলাম।
অপরাধ ক্ষমা করিও। আশীর্বাদ করিও।
আমি যেন বিজয়ী হয়ে তোমাদের কাছে ফিরে আসতে পারি।
ইতি- তোমার ছেলে দেবেশ।”

সেদিন ছিল আমাদের গ্রামের হাটবার। বাবা হাট থেকে ভালো মাছ এনেছেন, মা রান্না করছেন।
আর কিছুক্ষণ পরেই আমাদের সবাইকে খেতে ডাকবেন।
আমি বাড়ির কাউকে না বলে গোপনে নৌকায় গিয়ে বসলাম।

রাত ৮-৩০ মি: এর দিকে শাহজাদপুরের রাজ্জাক ও এরশাদ ভাই সহ কয়েক জনকে সাথে নিয়ে একটা নৌকায় এম.পি.এ জনাব মো: আব্দুর রহমান স্যার এলেন।
এম.পি.এ  স্যার কে দেখে আমি দেখা করার জন্য এগিয়ে সামনে গিয়ে আদাব দিলাম।
আমাকে দেখে এমপি স্যার বললেন,- দেবেশ, তুমি কেন? এত ছোট মানুষকে তো মুক্তিযুদ্ধে নিবেনা।
আমি অনুরোধ করলাম। এম.পি.এ স্যার বললেন-ঠিক আছে চলো।

তারপর রতন কান্দি পালেদের বিলের ঘাট থেকে রাত ৯-০০ টার দিকে আমাদের নৌকা ছাড়লো।
মানসিক ভাবে ভগবান কে প্রনাম করলাম। শুরু হলো এক কিশোরের জীবন পন যুদ্ধে যাওয়া।
আমরা সুজানগর সাত বাড়িয়া হয়ে পদ্মা নদী পাড় হয়ে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার চিলমারি ইউনিয়নের খারিজাথাক গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার অতিক্রম করলাম।
আমরা ভারতের পশ্চিম বাংলার জলঙ্গী বর্ডার দিয়ে ভারতে ঢুকলাম। একটি বি.এস.এফ ক্যাম্পে ঢুকলাম।
প্রাতঃক্রিয়াদি করে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। এম.পি.এ স্যার ও আমাদের গাইডার কে একটি চেয়ারে বসতে দিলেন।
আমাদের সবাই কে এক লাইনে দাড় করালেন। আমাদের গণনা করা হলো। আমরা হলাম ২২ জন।
এম.পি.এ স্যার আমাদের সাথে মালদহ পর্যন্ত গেলেন।

মালদহ বাজার থেকে মুড়ি ও কাঠাল কিনে আমাদের খাওয়ালেন তারপর আমাদের কে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষনের জন্য কামার পাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি অস্থায়ী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে কলিকাতা চলে গেলেন।

আমরা রাত ৯ টার দিকে কামার পাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে  পৌছালাম। তাঁরা আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন।
পর দিন সকালে আমাদের সবাইকে ফলোইং করালেন।
বয়সের স্বল্পতার কারণে ট্রেনিং কর্তৃপক্ষ আমাকে ভর্তি করলেন না।
নিরুপায় হয়ে আমি আমার ওল্ড মালদহের পিশে মহাশয় বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
তখন ভারতীয়রা বাংলাদেশের লোকদের কে জয় বাংলার লোক বলতো।
ভারতের ট্রেন ও বাসে বাংলাদেশের লোকের কোন ভাড়া লাগতো না।
বাস ও ট্রেনে ভাড়া চাইতে এলে “ জয় বাংলা” বললেই বুঝতে পারতেন আমরা বাংলাদেশের শরণার্থী।
কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্প থেকে একটি বাসে কাছাকাছির একটি রেল স্টেশনে গেলাম। তার পর ট্রেন ধরলাম।
বারসই রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে ট্রেন বদলাতে হলো।
আমি স্টেশনে বসে আছি। আমার কাছে ট্রেনের টিকেট নাই। মোবাইল কোর্টের লোক আমাকে ধরে নিয়ে গেল।
একটি রুমে বসালো। যাদের ট্রেনের টিকেট নাই তাদের ম্যাজিস্ট্রেট এক এক করে ডেকে ডেকে জরিমানা করলো।
পর্যায়ক্রমে আমার পালা এলো। আমাকে নাম জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম “জয় বাংলা”।
ওনারা বুঝতে পারলেন আমি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি। আমাকে জরিমানা না করে ছেড়ে দিলেন।
পরবর্তী ট্রেনে উঠে ওল্ড মালদহ স্টেশনে নেমে পিসে মহাশয় শ্রী বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য মহাশয়ের বাড়িতে গেলাম।
কয়েক দিন ওল্ড মালদহ, গাজল, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি আত্মীয় বাড়ি ঘুরলাম।

আমার পিশে মহাশয়ের ভগ্নিপতি ছিলেন একটি শরণার্থী ক্যাম্পের ইনচার্জ।
তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন-“ তুমি ছোট মানুষ তোমার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজন নাই।
আমি তোমাকে শরণার্থী ক্যাম্পে ভর্তি করে নিচ্ছি। তুমি রেশন, লারকি ও অন্যান্য সকল সুবিধা পাবে।
আমি বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য ভারত এসে শরণার্থী শিবিরে বসে বসে খাবো এতে সন্মত হতে পারলাম না।
আবার ফিরে এলাম কামার পাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে।
আমাদের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র নাথ বাগচী ও রতন কুমার দাস সহ কয়েক জন কে পেলাম।
তাঁরা আমাকে পরামর্শ দিলেন তুমি কাছের মালঞ্চ (কুরমাইল) ক্যাম্পের ইনচার্জ ৭ নং সেক্টরের উপদেষ্টা বেড়া-সাঁথিয়া নির্বাচনী এলাকার এম.এন. এ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ স্যারের কাছে যাও।

আমি তাঁদের পরামর্শে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ স্যার এর কাছে গেলাম। আমার পরিচয় দিয়ে আমাকে মুক্তিযুদ্ধে ভর্তি করার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলাম।
তিনি আমাকে কামাপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে ভর্তি করার ব্যবস্থা করলেন।
কামাপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষ আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। আমার দেশপ্রেম, সাহসী মনোভাব ও অন্যান্য শুনে ভর্তি করলেন।

প্রাথমিক ট্রেনিং ক্যাম্পে আমাদের ফলইং করিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়ানো, পিটি প্যারেড করানো হতো।
কদিন কামারপাড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে থাকার পর আমাকে, রবীন্দ্রনাথ বাগচী, রতন কুমার দাস ও মো: নজরুল ইসলাম কে ট্রান্সফার করলো মালঞ্চ ট্রানজিট ক্যাম্পে।
তারপর মালঞ্চ থেকে কুড়মাইল ট্রানজিট ক্যাম্পে।
কুড়মাইল থেকে আমাদের কে আনা হলো পতিরাম ক্যাম্পে।
পতিরাম ক্যাম্প থেকে এক যোগে ভারতীয় আর্মি লরিতে ২০/২২ জন কে নিয়ে আসা হলো দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার পানিঘাটা নামক ইন্ডিয়ান আর্মি ট্রেনিং ক্যাম্পে।

চলবে………..

নিজের স্মৃতি কথা লিখেছেন
-বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।