চলতি বছরের গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ২৩০ দিনের মতো চলছে দেশ দুইটির সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে কিয়েভ দখল নিয়ে সেখানে পুতুল সরকার বসানোর বাসনা নিয়ে পুতিন ইউক্রেনে যে আগ্রাসন শুরু করেছেন তা এখন পর্যন্ত অধরা। উল্টো ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ব্যর্থতার খবর ক্রমশ বেরিয়ে আসছে। ইউক্রেনে ঠিকমতো সাফল্য অর্জন করতে না পারায় পুতিন এখন পর্যন্ত অনেক জেনারেলকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
এই নিয়ে গত ৮ অক্টোবর ইউক্রেন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশটির বিমানবাহিনীর জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে দায়িত্ব দিয়েছেন পুতিন। কিয়েভের রুশ বাহিনীর ব্যর্থতার জেরে দুই সিনিয়র সামরিক কমান্ডারকে পদচ্যুত করার পরই সুরোভিকিনকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট, সুরোভিকিন তাজিকিস্তান, চেচনিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সঙ্গে লড়েছেন।
রোববার কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, রুশ বাহিনীতে ‘অত্যন্ত নির্দয়’ একজন যোদ্ধা ও সামরিক নেতা হিসেবে পরিচিত ৫৫ বছর বয়সী জেনারেল সুরোভিকিন।
জেনারেল সুরোভিকিনের জন্ম ১৯৬৬ সালে সাইবেরিয়ার শহর নভোসিবিরিস্কেতে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জুন মাসে এই জেনারেলকে রাশিয়ার দক্ষিনাঞ্চলীয় সামরিক গ্রুপের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২০১৭ সালে সিরিয়ার যুদ্ধে তিনি রুশ বিমানবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। তাতে তিনি বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। যুদ্ধের পর তাকে ‘রাশিয়ার বীর’ খেতাব দেওয়া হয় এবং পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন মতে, জেনারেল সুরোভিকিন রুশ সামরিক বাহিনীতে অত্যন্ত ‘নির্দয়’ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক জীবনে ২ বার জেল খেটেছেন সুরোভিকিন। তার নেতৃত্বাধীন সেনারা রুশ রাজধানী মস্কোতে ৩ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করার পর তিনি ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় আবারও কারাবরণ করেন সুরোভিকিন। তবে তাকে পরবর্তীতে বিনা বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়। ৪ বছর পর তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র পাচারের অভিযোগ আসে। বিচারে সাজা পেলেও তা খারিজ হয়ে যায়।
রুশ এই জেনারেলের বিরুদ্ধে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে বোমাবর্ষণ অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই হামলায় প্রায় পুরো শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। সে সময় রুশ বাহিনী দেশটির শাসক বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহ দমনে সহায়তা করছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধের নেতৃত্বে সুরোভিকিনকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে কিছু বিশ্লেষক জানিয়েছেন, তাকে নিয়োগ দেওয়া এটাই নির্দেশ করে, যে রাশিয়া বিচ্ছিন্নভাবে আক্রমণ না চালিয়ে একটিমাত্র অঞ্চলকে লক্ষবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করে হামলা চালাবে।
সুইস মিলিটারি রিভিউর আলেক্সান্দ্রে ভট্রাভার্স বলেন, এটা লুহানস্ক হতে পারে, দোনেৎস্ক হতে পারে কিংবা হতে পারে আরও দক্ষিণের কোনো অঞ্চল। বস্তুত, আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা হল, রুশ অভিযানের আওতা কমিয়ে আনা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার ইউক্রেনজুড়ে মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সুরোভিকিনকে দায়িত্ব দেওয়ার পরেই ইউক্রেনে এটি এখন পর্যন্ত বড় ধরনের হামলা। এই হামলার পর সুরোভিকিনের সাবেক সহকর্মী দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, কিয়েভে আজ সকালে কি হয়েছে তা দেখে আমি অবাক হইনি। সুরোভিকিন হলো দয়ামায়াবিহীন, মানুষের জীবনের মূল্য তার কাছে কম। আমার ভয় তার হাত ইউক্রেনের রক্তে রঞ্জিত হবে।