ঢাকামঙ্গলবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৩
  1. #টপ৯
  2. #লিড
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আন্দোলন
  7. ইচ্ছেডানা
  8. উদ্যোক্তা
  9. ক‌রোনা মহামা‌রি
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. চাকুরীর খবর
  15. জাতীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হজ-পরবর্তী সময়ে হাজিদের করণীয় আমল

দেশইনফো২৪.কম
নভেম্বর ১৪, ২০২৩ ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

হজ্ব ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে পাঁচটি বিষয়ের উপর ইসলামের মূল ভিত্তি, তার পঞ্চমটি হল হজ্ব। তবে নামায, রোযা থেকে হজ্বের বিধানটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা, এটি মুসলমানের উপর প্রতিদিন অথবা প্রতি বছর ফরয হয় না; বরং জীবনে মাত্র এক বারই ফরয হয়ে থাকে। আর বস্ত্তত হজ্ব পালন আল্লাহর প্রতি বান্দার অকৃত্রিম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।আর সম্পদশালী, সচ্ছল ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। সারা বিশ্ব থেকে পবিত্র নগরী মক্কায় অর্থ ব্যয় করে হাজির হওয়ার মাধ্যমেই হজ পালন করতে হয়। পবিত্র নগরী মক্কায় আসা এবং এখানের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদন ভ্রমণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মধ্যেই শুধুমাত্র হজের উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যায় না বরং হজ পরবর্তী সময়েও রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ জীবন-যাপন ও আমলি জিন্দেগি।

আল্লাহ তাআলা একনিষ্ঠ একত্ববাদের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য অন্যতম সহায়ক হলো হজ। সুতরাং হজ পরবর্তী জীবন হবে তাওহিদ নির্ভর। হজ পরবর্তী এমন কোনো কাজই করা যাবে যেখানে তাঁর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ন্যূনতম সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি (বিশেষ) বার্তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে শিরককারীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গেও নেই।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩)। হজের পর গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনই হলো হজ কবুল হওয়ার লক্ষণ। হজের পর হজ পালনকারীদের উচিত আল্লাহর বিধি-বিধান পালনের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা। মনীষীগণ বলেছেন, হজ পরবর্তী জীবনে হজ পালনকারী তাঁর ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। পাপের কাজ থেকে দূরে থাকে।হজ পরবর্তী সময়ে সমাজে ভালো কাজের অংশগ্রহণ বাড়ানো। অন্যায় প্রতিহত করতে বিশ্বনবির পন্থায় অবিরাম চেষ্টা সাধনা চালিয়ে যাওয়া। নিজে যেমন অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবে তেমনি অন্যকেও অন্যায় থেকে হিফাজত করতে সচেষ্ট থাকা। আর হজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান।

তাঁরা অনেক কষ্ট করে শারীরিক ও আর্থিক এই ইবাদত সম্পাদন করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে হজ পরবর্তী করণীয় ও দিকনির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন। এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে কী বলেন? হজ পালনকারীদের উদ্দেশ্যে তাদের বাকি জীবনের করণীয় সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন- ‘অতঃপর যখন তোমরা (হজের) যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে নেবে, তখন (মিনায়) এমনভাবে আল্লাহর (জিকির) স্মরণ করবে, যেমন (জাহেলি যুগে) তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষগণকে স্মরণ করতে অথবা তার চেয়েও বেশি গভীরভাবে (স্মরণ করবে)। এমন কিছু লোক আছে যারা বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে (সাওয়াব) দান কর।’ মূলত তাদের জন্য পরকালে (কল্যাণের) কোনো অংশ নেই।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০০)।

পক্ষান্তরে তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোজখের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)। হজ সম্পাদন করতে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায়। ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের লোকেরা হজ সম্পাদন করেই মিনায় মেলার আয়োজন করতো। তাই আল্লাহ তাআলা জাহেলি যুগের সে রীতির পরিবর্তন করে মানুষকে নির্দেশ দেন যে, হজের পর মেলা নয় বরং আল্লাহর স্মরণই সর্বোত্তম। আর তা মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত রাখা আবশ্যক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজের উদ্দেশ্যে যাওয়া লোকদেরকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে কি করতে হবে তা বর্ণনা করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে- ১, হজরত কাব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি)

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত হজের দীর্ঘ সফর শেষে যখন কোনো মানুষ নিজ বাড়িতে ফিরবে তার উচিত নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে দু রাকাআত নামাজ আদায় করা অতঃপর ঘরে ফেরা। এ নামাজ আদায় করা প্রিয়নবির অনুসরণীয় সুন্নাত আমল।’ মসজিদ থেকে দু’ রাকাআত নামাজ আদায় করে নিজ ঘরে প্রবেশের পরও শুকরিয়াতান দু’ রাকাআত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে- ২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দু রাকাআত নামাজ পড়বে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনও দু’ রাকাআত নামাজ আদায় করবে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার)। নিরাপদে হজ পালন করে দেশে ফিরে আসার পর শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেয়াও বৈধ। হাদিসে এসেছে- ৩. হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি পশু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবায়ে কেরাম তা থেকে আহার করেছেন।’ (বুখারি)।

হজ পরবর্তী সময়ে বেশি বেশি এ জিকির করা- উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখেরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’ অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোজখের যন্ত্রণাদায়ক আগুণ থেকে রক্ষা কর।’

হজ কবুল হওয়ার নিদর্শন:- যাদের হজ কবুল হয়, তাদের জীবনের মোড় ও কর্মের অভিযাত্রা ঘুরে যায়। ভবিষ্যতে গুনাহ থেকে বিরত থাকার আগ্রহ বাড়ে। আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি মানুষ যতœবান হয়। হজ করার পর যার জীবনে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসেনি, তার হজ কবুল হওয়ার বিষয়টি সন্দেহমুক্ত নয়। (আপকে মাসায়েল, খ-: ৪, পৃষ্ঠা: ২৫)।

অনেকের হজ সন্দেহযুক্ত:- বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজে যান। বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২২ হাজার হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ৩২১ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন।হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এখন হাজিদের দেশে ফেরার পালা। বাংলাদেশি হাজিদের দেশে ফেরাতে ফ্লাইট শুরু রবিবার (২ জুলাই) থেকে, চলবে ২ আগস্ট পর্যন্ত।বাংলাদেশ থেকে ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ ১,২২,৮৮৪ জন সৌদি আরবে গিয়েছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ১৫৯টি ফ্লাইটে ৬১,১৮০ জন হজযাত্রী। সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ১১৩টি ফ্লাইটে ৪১,৪৬৮ জন হজযাত্রী। ফ্লাইনাস পরিবহন করেছে ৫৩টি ফ্লাইটে ২০,২৩৬ জন হজযাত্রী।সৌদি আরবে সর্বমোট ইন্তেকাল করেছেন ৪৩ জন হাজি। এরমধ্যে পুরুষ ৩৫ জন এবং নারী ৮ জন। কিন্তু কয়জনই বা নিষ্পাপ হয়ে ফিরতে পারেন? দেশে গুণী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে; তবে সমাজের অনাচার কি কমছে? দেশ ও সমাজ তাদের মাধ্যমে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে। তারাও কি যথাযথভাবে পরিশুদ্ধ হতে পারছেন? অনেকজনের হজ-ওমরাহ হানিমুন, শপিং, পর্যটন ও প্রমোদভ্রমণ উপলক্ষে দেশ-দেশান্তরে ছুটে চলার চেয়ে ভিন্ন নয়। মক্কা-মদিনার জিয়ারত ও পবিত্র সফর, তাদের শুভবুদ্ধি ও সুন্দর অনুভূতি জাগ্রত করতে পেরেছে? যদি না হয়, তাহলে তারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তাদের হজ কবুল হওয়ার বিষয়টি আল্লাহ ভালো জানেন।

হজ থেকে ফেরার পর আমল:- হজ থেকে ফিরে এসে নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নাত। হজরত কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি শরিফ) হজ থেকে ফিরে শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া বৈধ। ইসলামী ফিকহের পরিভাষায় সে খাবারকে ‘নকিয়াহ’ বলা হয়। জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন। ’ (বুখারি) তবে অহংকার, লোকদেখানো ও বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে এমন দাওয়াতের ব্যবস্থা করা ইসলাম অনুমোদন করে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, খ-: ৭, পৃষ্ঠা: ১৮৫)।

ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ :- হজ থেকে দেশে ফেরার পর ঘরে পৌঁছে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাত নামাজ পড়বে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনো দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে। ’ (মুসনাদে বাজ্জার)।

পরিশেষে, সর্বোপরি কথা হলো, হজে মাবরুর নসিব হলে হজপালনকারী ব্যক্তি সদ্য প্রসূত ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। তাই হজ পালনকারী ব্যক্তি হজ পরবর্তী জীবনে নিজেকে নিষ্পাপ কুলুষমুক্ত রাখতে দুনিয়ার সব কাজেই আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা একান্ত জরুরি।হজসহ ইসলামের সব ধরনের ইবাদাত ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে তাঁর হুকুম পালন করা জরুরি। নামাজ পড়ে বিধায় নামাজি; হজে করেছেন বিধায় হাজি ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকাও জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানো ইবাদাত বন্দেগি থেকে হিফাজত করুন। হজ পরবর্তী জীবন-জিন্দেগি ও ইবাদাত-বন্দেগি আল্লাহর পথে ও মতে পরিচলনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।